শেষ ইচ্ছা 🙂

বহু বছর পর,...
একদিন হটাত বাবা বলে উঠলো, মা কিরে কাউকে পছন্দ ? নাকি আমরা পাত্র দেখা শুরু করবো?

বাবার মুখে এমন কথা শুনে তুলি পাগলের মত ছটপট করতে লাগলো । চোখে এক সমুদ্র জল নিয়ে ছুটে গিয়ে আছড়ে পড়লো বিছানায়, এই কথা; কিভাবে? কেন ? বছর কয়েক আগে তো ওনাদের জন্যই আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম উজ্জ্বল কে । উজ্জ্বল কেঁদে কেঁদে বলেছিল অপেক্ষা কর সব ঠিক হয়ে যাবে , কিন্তু আমি শুনিনি । হাত পা গুলো কেমন কাঁপতে শুরু করলো, আমি উজ্জ্বলকে একবার বলেছিলাম যে তোর কথা গুলো সব মিলে যায়। তাহলে সেদিন কেন শুনলাম না ওর কথা। না অনেক দেরি হয়ে গেছে আমায় খুঁজে বের করতে হবে উজ্জ্বল কে। ঠিকানা টা কি যেন বলেছিল ওহ হা ' মায়াপুর ' ।
ব্যাস ফটাফট ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দিলাম মায়াপুরের উদ্দেশ্যে; মনে মনে ভাবতে শুরু করলাম কীকরে খুজবো? কোনো ছবি ও তো নেই সব তো delete করে দিয়েছিলাম। দাড়া একবার ফেইসবুকে সার্চ করে দেখি....
একি উজ্জ্বল নামে তো কাউকে দেখাচ্ছে না, একসময় ওর নাম সার্চ করলে সেটা প্রথমে আসতো তাহলে এখন দেখাচ্ছে না কেন ? ও কি নাম চেঞ্জ করলো? যায় হোক বহু কষ্টে ওর একটা পুরনো ছবি খুঁজে পেলাম সেটা নিয়েই পৌঁছে গেলাম মায়াপুর ! ওর কোয়ালিফিকেশন গুলো জানতাম তাই খুঁজতে বেশি দেরি হয়নি , ওদের বাড়ি পৌঁছে গেলাম গিয়ে দেখি ওদের তৈরি হওয়া নতুন বাড়িটাই কেমন যেন শেওলা জমে গেছে, ওরা কি বাড়িটা কমপ্লিট করেনি নাকি , ওরা কি এখানে থাকে না নাকি ? পাশের এক লোককে জিজ্ঞাসা করলাম। - সে বলে উঠলো কাকে চাই ? বললাম উজ্জ্বল এখানে থাকে ? - মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো সে তো নিখোঁজ আর ইশারা করে তাদের পুরনো বাড়িটা দেখিয়ে দিল বললো যাও ওখানে ওর বাবা মা থাকে।
ওখানে যেতেই উজ্জ্বলের মা বলে উঠলো কে তুমি মা? - আ আ আমি , আমি তুলি
- মা বলে উঠলো কেন এসেছো ? কি দরকার
- না মানে উজ্জ্বল
- উজ্জ্বলের মা ইশারাই একটা রুম দেখিয়ে দিল

রুম এ যেতেই কান্নায় ফেটে পড়ল তুলি , একি উজ্জ্বলের ছবি তে মালা দেওয়া কেন?
- হটাত ওর মা এসে হাতে একটা ডাইরি ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল, ডায়েরি তে বাকি পাতা একটাও নেই সব গুলো যেন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ।
তবে শেষের পাতা দুটোই কি যেন লেখা - 
"তুই সেদিন হন্যি হয়ে খুঁজবি আমায়
আর আমি তারা হয়ে হাসবো। "
মনে হলো সে যেন ভবিষ্যত্ টা জানত! 
আর শেষের পাতায় একটা গল্পঃ লেখা শুরু করেছিল ...
কিন্তু গল্পঃ কই?
গল্পের নাম - শেষ ইচ্ছা
কন্টেন্ট এর জায়গায় বড় বড় করে লেখা - "এবার পূরণ হল ।"

এটা দেখে কিছুই বুঝতে বাকি রইলো না তুলির, উজ্জ্বলের শেষ ইচ্ছে এটাই ছিল যে এই ডায়েরি টা যেন তুলির হাতে পৌঁছায় ।

বিষণ্ণ মনে ডায়েরি টা হাতে নিয়ে এবড়ো খেবড়ো চুলে বাড়ি ফিরলো তুলি, 
হটাৎ বাবা বলে উঠলো - কি রে কোথায় ছিলি? আর শরীরের এমন অবস্থা কেন?
মুখে কোনো শব্দ নেই কানে শুধু একই কথা বাজে 
" থেকে যা প্রিয়, সময় হলে সব মেনে নেবে " শুধু একটু বয়স টা হতে দে ।
নিজেকে আজ বড্ড দোষী মনে হচ্ছে যদি কথা গুলো একবার শুনতাম, যদি জেদ না করতাম, যদি ভরসা রাখতাম আমাদের ভালোবাসার উপর 🙂

হটাৎ দেখি পাশের রুম থেকে বাবা মা কে বলছে - তুমি আমার উপর ভরসা করেছিলে বলেই আমরা একসাথে আছি ☺️

নিজে কেমন কলঙ্কিনী হয়ে গেলাম, হারিয়ে গেলাম, হারিয়ে ফেললাম, দুনিয়া টা কে 🙂🙏

লেখা : গৌরব মাল ( Gourab Mal )
GOURAB

Developer by profession, Writer by interest, Coder by passion; That's all about me.

Post a Comment

Previous Post Next Post